শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৮:৪১ অপরাহ্ন

কিশোর অপরাধ নিয়ে ভাবতে হবে

কিশোর অপরাধ নিয়ে ভাবতে হবে

অধ্যাপক ডা: শাহ মো: বুলবুল ইসলাম :

আমাদের দেশে কিশোর অপরাধ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আস্তে আস্তে এটি বিস্তৃত হয়ে সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। কিশোর-তরুণরা অনেক বেশি অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় সামান্য কারণে একজন আরেকজনকে মারাত্মকভাবে জখম কিংবা খুন করতে পর্যন্ত কুণ্ঠাবোধ করছে না। বন্ধু-বান্ধব কিংবা নিজেদের মধ্যে এ প্রবণতা বেশি দেখা যায়। এ ধরনের ঘটনাগুলো আমাদের শঙ্কিত, আতঙ্কিত, হতাশাগ্রস্ত ও রীতিমতো উদ্বিগ্ন করে। র‌্যাবের মহাপরিচালক কয়েক দিন আগে উল্লেøখ করেছেন, এটি অত্যন্ত মারাত্মক একটি প্রবণতা। এই প্রবণতাকে আমাদের রুখতে হবে। তার এই বক্তব্যকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু রুখতে হবে, বললে তো আর রোখা যায় না। প্রথমে এর অন্তর্নিহিত কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের শিশু-কিশোররা মুক্ত পরিবেশে প্রজাপতির মতো ঘুরে বেড়াবে। পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। তারা কেন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে? এর কারণগুলো খতিয়ে দেখা অবশ্যই প্রয়োজন।

শিশুরা হলো সৃষ্টিমুখী, সৃজনশীল। আমাদের দেশের গ্রামের একটি ছেলে বিমান তৈরি করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এটি ভাইরাল হয়েছে। এই ধরনের সৃজনশীল কাজে আমরা যদি শিশু ও তরুণদের উদ্বুব্ধ করতে পারি তাহলে তারা এসব কাজে আনন্দ পাবে। বিপথগামী হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। আগে পাড়ায় পাড়ায় খেলার মাঠ ছিল, খেলাধুলার ব্যবস্থা ছিল; বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। বিশেষ করে স্কুল-কলেজে বিভিন্ন সময়ে বির্তক, আবৃত্তি, গল্প বলা, দেয়ালিকা লেখা ও বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন হতো। তরুণরা এতে নিজেদের ব্যস্ত রাখত। পরিস্ফুটিত হতো তাদের বিভিন্নমুখী প্রতিভা। এগুলোকে ফিরিয়ে আনতে হবে। শুধু পড়া পড়া এবং পড়া। সকাল ৭টা থেকে শুরু হয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত পড়া। বইয়ের বোঝা থেকে তাদের বের করে আনতে হবে। তাদের বিকশিত হওয়ার জন্য পারিবারিক ও সামাজিক সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। পরিবারের সিদ্ধান্তে তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে যেন তারা নিজেদের মূল্যায়ন করতে পারে।

কয়েক দিন আগে ঢাকা শহরের কয়েকজন স্কুলছাত্রী হারিয়ে গিয়েছিল। যখন তাদের পাওয়া গেল, জানা গেল অ্যাডভেঞ্চারের জন্য এ কাজটি তারা করেছে। তাদের সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত রাখা গেলে হয়তো এটি ঘটত না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে আরো গঠনমুখী করা দরকার। টেলিভিশনে শিশুদের অনুষ্ঠান আরো বাড়াতে হবে। এ ব্যাপারে অনেক সময় দিতে হবে। এখন তো সারা দিন শুধু নাটক, সিনেমা আর সিরিজ অনুষ্ঠান। চ্যানেলগুলোতে শিশুদের জন্য সময় খুবই কম। অথচ শিশুরাই আগামী দিনের সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার কারিগর। এদের জন্য প্রচুর পরিমাণে সময় দিতে হবে। প্রয়োজনে শিশুদের জন্য নির্দিষ্ট শিশু টেলিভিশন চ্যানেল চালু করতে হবে। বিভিন্ন পাড়ায়-মহল্লায়, গ্রামে স্থানীয় নেতাদের গঠনমূলক কর্মকাণ্ড, চিত্তবিনোদন, বনভোজন, বিভিন্ন মননশীল প্রতিযোগিতা আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে।

কোনো কিশোর বা তরুণ যখন অপরাধ করে, তাকে অপরাধ সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। কিন্তু এগুলো পরিবেশবান্ধব নয়। তাকে অপরাধীর দৃষ্টিতে দেখা হয়। অথচ এগুলো সংশোধন কেন্দ্র। সংশোধন করার জন্য গঠনমুখী পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সে যেন মনে করে, সে তার বাড়িতে আছে, স্কুলে আছে। তার পড়াশোনা, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা থাকতে হবে। এরা আমাদেরই সন্তান। এদেরকে প্রথম চোটেই অপরাধীর তকমা লাগিয়ে দেয়া হলে, তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। এ ব্যাপারগুলো যদি আমরা পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে মোকাবেলা করতে পারি, তাহলেই কেবল এই কিশোর-তরুণদের আমরা স্বাভাবিক জীবনে সম্পৃক্ত করে সৃজনশীল একটি জাতি গঠনের পথে এগিয়ে যেতে পারব।
লেখক : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877